Concentration

মনোযোগ : মনের বল

 

মনের সবচেয়ে বড় শক্তি মনোযোগ । মনোযোগ, একাগ্র মনোযোগ মনের শক্তিকে, চিন্তার শক্তিকে করে তোলে অপ্রতিরোধ্য । কোন চিন্তা বা কাজের প্রতি অখন্ড ও একাগ্র মনোযোগ দিতে পারলে তাতে সবসময়ই যুক্ত হয় এক নতুন মাত্রা । চিন্তা বা কাজের ক্ষেত্রে সফল পদচারনার মূল কথাও হচ্ছে অখন্ড মনোযোগ । মনোযোগ হচ্ছে প্রতিটি দক্ষতার ভিত্তি । মনোযোগের ফলেই আমরা যুক্তি দিতে পারি, চিন্তা করতে পারি, অসহনীয় যানজটের মধ্যে থেকেও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারি । ব্যবসা, বানিজ্যে নতুন পরিকল্পনা নিতে পারি, গানের সুর তুলতে পারি, নাচের মুদ্রায় দক্ষতা দেখাতে পারি, দুঁর থেকে আগত ধ্বনির অর্থ উপলব্ধি করতে পারি, সঙ্গিতের রাগের পার্থক্য বুঝতে পারি, চায়ের পাতার একটা থেকে অন্যটার ফ্লেভারের পার্থক্য নিরূপন করতে পারি ।


কিন্ত মনের খেয়ালীপনা থেকে মুক্তি পাওয়া যে কত কঠিন, একটা উদাহরণ থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে । ধরুন আপনার কাছে মোট ১০০ ইউনিট মনোযোগ আছে । যখন মন কিছু ভাবে বা মন কোন কিছুর প্রতি আকৃষ্ট হয় তখন মনোযোগ বা মেন্টাল এনার্জির একটা অংশ ব্যয় হয়। আর যখন আপনার চিন্তা বিঘ্নিত হয় বা মনে অন্য কোন চিন্তা আসে তখন মনোযোগ বা মেন্টাল এনার্জির অপচয় হয়।

 

এবার ধরা যাক, আপনি কোন লেখার কাজ নিয়ে বসেছেন । কাজ করতে গিয়ে মনে হলো বসাটা ঠিক জুতসই হয় নি । 

একটু নড়েচড়ে বসলেন । আর এটা করতে গিয়ে আপনার মনোযোগের একটা অংশের অপচয় হলো । আপনি আপনার কোন দৈহিক টেনশন সম্পর্কে সজাগ না থাকলেও পেশীর যে কোন উত্তেজনা আপনার মেন্টাল এনার্জির অপচয় ঘটাবে।

ধরুন এই নড়াচড়ায় ১৫ ইউনিট মনোযোগের অপচয় ঘটল।

আবার লিখতে বা কাজ করতে শুরু করলেন, দেখা গেল সারাদিন যেখানে নাক, কান বা শরীরের কোথাও চুলকায় নি, সেখানে চুলকানি অনুভব করলেন, অবচেতন ভাবেই চুলকানির কাজে লেগে গেলেন। এভাবে আবার ১৫ ইউনিট মেন্টাল এনার্জির অপচয় হলো।

আবার লিখতে বা কাজ করতে বসে একটু পরেই একঘেয়েমি লাগতে শুরু করল। আপনার মনের একটা অংশ লিখতে বা কাজ করতে চায়, আর একটা অংশ তখন বাইরে বেড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠল। আপনার আরও ১৫ ইউনিট মেন্টাল এনার্জির অপচয় হলো। একটু পরেই হয়তো আপনি ক্লান্তি অনুভব করলেন, একটু ঝিমুনি এসে গেল। আরও ১৫ ইউনিট মনোযোগ বা মেন্টাল এনার্জির অপচয় হলো। এখন কল্পনা করুন, লেখা বা কাজ থেকে আপনার চিন্তা উদ্দেশ্যহীনভাবে ভেসে বেড়াতে শুরু করল। আপনি হয়তো চিন্তা করতে লাগলেন ইদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার কথা। আপনার আরও ১৫ ইউনিট মনোযোগের অপচয় ঘটল। এবার কল্পনা করুন পাকঘরের পানির কল ভালভাবে বন্ধ না করে কাজর মেয়ে কোথাও গেছে । আপনাতক উঠে গিয়ে কল বন্ধ করতে হবে । কারণ টপটপ শব্দ আপনার মধ্যে চুড়ান্ত বিরক্তির জন্ম দিচ্ছে । আরও ১৫ ইউনিট মনোওযাগের অপচয় ঘটল । একটা মাত্র লেখা বা কাজ নিয়ে বসে ১০০ ইউনিট মনোযোগ থেকে যদি এতগুলো ইউনিট মনোযোগের অপচয় ঘটে তা হলে অবশিষ্ট আর কি থাকে?

 

শুধু এই একটি লেখা বা কাজের বেলায়ই নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এবং বেশির ভাগ সময়ই আমরা মেন্টাল এনার্জির শুধুমাত্র অংশ বিশেষ ব্যবহার করে থাকি । কারণ আমাদের মন সব সময় কল্পনা, প্রত্যাশা, বিশ্লেষণ ও দুশ্চিন্তায় নিয়োজিত থাকে । আমাদের মন একই সময় বহু ধরনের কাজ করে । মনের এক অংশ হয়তো ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছে, সাথে সাথে অন্য অংশ অতীত রোমন্থন করছে, মনের এক অংশ হয়তো কথা বলছে অন্য অংশের সাথে। কথা ও ইমেজের তোরে চিন্তা হয়ে যাচ্ছে এলোমেলো।

ফুটবল মাটিতে পড়ে যেমন অনির্ধারিত গতিতে উপরে লাফিয়ে ওঠে, তেমনি আমাদের চিন্তাও বেশিরভাগ সময় ফালতু লাফালাফি করে । আমাদের জীবনে ১০০ ইউনিট মনোযোগের বেশিরভাগই আমরা অপচয় করে থাকি ।